সফল হবার প্রথম নিয়ম। সময়কে মূল্য দাও। Value of Time

কাল করবো বা পরে করবো এমন কথা বলে আমরা কমবেশি সবাই নিজেদের সময়কে অবহেলা করি। আর মোবাইলে ঘন্টার পর ঘন্টা স্ক্রল করতে করতে কত সময় যে হারিয়ে ফেলছি সেটার খবরও রাখি না। আমার দাদু প্রায় একটা কথা বলতেন জীবনে সময়ের গুরুত্ব সেই বোঝে যে জীবনে সময়কে অবহেলা করে পড়ে তার কষ্ট পেয়েছে। সময় শুধু ঘড়ির […] The post সফল হবার প্রথম নিয়ম। সময়কে মূল্য দাও। Value of Time appeared first on Trickbd.com.

সফল হবার প্রথম নিয়ম। সময়কে মূল্য দাও। Value of Time

কাল করবো বা পরে করবো এমন কথা বলে আমরা কমবেশি সবাই নিজেদের সময়কে অবহেলা করি। আর মোবাইলে ঘন্টার পর ঘন্টা স্ক্রল করতে করতে কত সময় যে হারিয়ে ফেলছি সেটার খবরও রাখি না। আমার দাদু প্রায় একটা কথা বলতেন জীবনে সময়ের গুরুত্ব সেই বোঝে যে জীবনে সময়কে অবহেলা করে পড়ে তার কষ্ট পেয়েছে। সময় শুধু ঘড়ির কাটার মধ্যেই সীমাবদ্ধ না। এটাই আমাদের ভাগ্য। আমাদের ভবিষ্যৎ গড়ে তোলে। যে সময়ের কদর করে সে পৌঁছে যায় সাফল্যের শিখরে। আর যে সময় নষ্ট করে সে পুড়ে যায় আফসোসের আগুনে। তাই যদি তুমিও চাও তোমার জীবনে কোন সুযোগ যেন হাতছাড়া না হয় তাহলে মন দিয়ে এই গল্পটা শোনো। এটা শুধু একটা গল্প নয় এটা একটা সতর্ক বার্তাও বটে।

একটি ছোট গ্রামে এক খুবই অলস ছেলে বাস করত। সে সবসময় গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো দেরি করে করতো। আর এই কারণে পড়াশোনা ও জীবনের অন্যান্য দিকেও সে পিছিয়ে পড়েছিল। তার পরিবার ও শিক্ষকরা বারবার তাকে সময়ের মূল্য বোঝাতে চেষ্টা করেছিল কিন্তু সে কিছুই শোনে না। সে তার ভবিষ্যৎ নিয়ে একদমই চিন্তিত ছিল না এবং সে প্রায় অপ্রয়োজনীয় জিনিসের সময় নষ্ট করত। একদিন সেই গ্রামে এক জ্ঞানী মানুষ এল যিনি তার জ্ঞান ও বুদ্ধিমত্তার জন্য খুবই বিখ্যাত ছিলেন। অনেক মানুষ তার সঙ্গে দেখা করতে চাইতো এবং তার কাছ থেকে কিছু শেখার আশা করতো। সেই অলস ছেলেটিও ভাবল যদি তিনি তাকে কিছু পাঠ দেন তাহলে হয়তো সেও তার বন্ধুদের থেকে এগিয়ে যেতে পারবে।

একদিন সে দেখল ওই জ্ঞানী লোকটি পার্কে কিছু লোকের সাথে কথা বলছেন। লোকজন চলে গেলে সে জ্ঞানী লোকটির সামনে গেল এবং বলল অনুগ্রহ করে আমাকে সাহায্য করুন। আমি নিজেকে এক ব্যর্থ মানুষ হিসেবে মনে করি। আমি আমার বন্ধু ও সহপাঠীদের তুলনায় সব ক্ষেত্রেই পিছিয়ে আছি। আমিও সফল হতে চাই। দয়া করে আমাকে বলুন আমি কিভাবে এগিয়ে যেতে পারি। জ্ঞানী লোকটি তার দিকে মায়া ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন, বাছা তুমি এই সমস্যায় পড়েছো। কারণ তুমি সময়ের মূল্য বোঝো না। তুমি সবসময় কাজ ফেলে রাখো। আর অমূল্য মুহূর্তগুলো নষ্ট করো।

আমি তোমাকে একটা গল্প বলি যা তোমাকে সময়ের গুরুত্ব বুঝতে সাহায্য করবে। ছেলেটি মন দিয়ে শুনতে লাগল। জ্ঞানী লোকটি বলতে শুরু করলেন। একসময়ের কথা এক রাজা ছিলেন যিনি খুব দয়ালু ও উদার ছিলেন। তিনি তার প্রজাদের খুব ভালোবাসতেন এবং সবসময় তাদের সাহায্য করতেন। একদিন তার এক পুরনো বন্ধু আসলো তার সঙ্গে দেখা করতে যে কিনা একসময় তার সহপাঠী ছিল। সেই বন্ধু ছিল গরীব বেকার। আর এজন্য সমাজে তার কোন সম্মানও ছিল না। সে সবসময় তার দুর্ভাগ্যের অভিযোগ করত এবং তার সমস্যার জন্য অন্যদের দোষারোপ করত।

রাজা তাকে চিনতে পারলেন এবং তার জন্য মন খারাপ করলেন। তিনি বন্ধুকে কাছে ডাকলেন এবং জীবনের অবস্থা নিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন। তার বন্ধু দুঃখ করে বলল, হে রাজা আমি বুঝিনা সবাই কেন ভাবে যে আমি কিছুই পারি না। যখনই আমি কোথাও চাকরির জন্য আবেদন করি সবাই আমাকে ফিরিয়ে দেয়। আমার সমালোচকেরা সবার কাছে বলে বেড়ায় আমি নাকি সময় মত কোন কাজ করি না। এখন আমি কি করব বুঝতে পারছি না। রাজা বললেন, চলো একটা চুক্তি করি। আজ সূর্যাস্তের আগে তুমি আমার রাজকোষ থেকে যত খুশি সোনারত্ন নিতে পারো আর সবটাই তোমার হবে।

বন্ধু খুব খুশি হলো এবং রাজাকে ধন্যবাদ দিল। সে ছুটে বাড়ি গেল এবং তার স্ত্রীকে খবর দিল। স্ত্রীও খুব খুশি হলো এবং বলল, তুমি এখনই যাও আরো সোনাত্ন নিয়ে এসো। কিন্তু সে বলল আমি এখনই যেতে পারবো না। আমার খুব ক্ষুধা লাগছে। আগে কিছু খেয়ে নিই। স্ত্রী তাড়াতাড়ি খাবার তৈরি করল আর সে আরাম করে খেয়ে নিল আর ভাবলো তার হাতে অনেক সময় আছে। খাওয়ার পর তার ঘুমও পাচ্ছিল। তাই সে ভাবলো একটু ঘুমিয়ে নেই। পরে রাজকুশে যাবো। সে শুয়ে পড়ল। কিন্তু সে বড়লোক হবার স্বপ্ন দেখতে দেখতে ঘুমে বিভোর হয়েছিল। দুই ঘন্টা পর তার স্ত্রী তাকে ডেকে তুলল। যখন জেগে উঠলো তখন সে দেখল এখন মাত্র দুপুর।

তাই এত আগে তাকে ডেকে দেবার জন্য সে তার স্ত্রীর উপর রাগ করে কিছু বস্তা নিয়ে রওনা হলো রাজপ্রাসাদের দিকে। করা রোদে তখন তার খুব গরম লাগছিল। সে ভাবলো এই গাছের নিচে একটু বিশ্রাম নেই। তারপর আবার যাত্রা শুরু করব। সে গাছের নিচে বসে পড়ল। আর বাতাসটাও খুব মিষ্টি ছিল। তাই বসার সঙ্গে সঙ্গেই সে আবার ঘুমিয়ে পড়ল। কিন্তু এবার সে আরো গভীর ঘুমেছিল। এবারও সে আগের মতোই স্বপ্ন দেখতে লাগল। যখন জেগে উঠলো তখন সন্ধ্যা হয়ে গেছিল এবং সূর্য ডুবে যাচ্ছিল। সে তাড়াতাড়ি উঠে প্রাসাদের দিকে দৌড় দিল কিন্তু তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। সূর্য ডুবে গেছে এবং প্রাসাদের দরজা বন্ধ হয়ে গেছে। অলস লোকটি হতাশ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল।

সে তার সুযোগ হারালো কারণ সে তার সময়ের মূল্য দেয়নি। গল্পটা শেষ করে জ্ঞানী লোকটি ছেলেটির দিকে তাকালেন। ছেলেটি চুপ করে রইল। সে তার ভুল বুঝতে পেরেছিল। সে লজ্জা পেল এবং জ্ঞানী লোকটিকে ধন্যবাদ দিল। তখনই সে প্রতিজ্ঞা করল সে বদলে যাবে এবং বুঝতে পারল যে সময় অমূল্য এটিকে নষ্ট করা উচিত নয়। সে বাড়ি ফিরে গেল এবং তার লক্ষ্য পূরণের জন্য কঠোর পরিশ্রম শুরু করল। সে দেরি না করে তার কাজগুলো সময়মত করতে লাগলো এবং ফলপ্রসু হয়ে উঠলো। তার পরিবার ও বন্ধুরা তাকে সম্মান দিতে লাগলো এবং সে সুখী হয়ে উঠলো।

মনে রাখবেন বাস্তব জীবনেও সময় সোনার চেয়েও মূল্যবান। এটি আমাদের সবচেয়ে দামি সম্পদ। আমাদের জীবনে সময় সীমিত। তাই আমাদের এটিকে বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে ব্যবহার করতে হবে। একটি বিখ্যাত উক্তি আছে যদি তুমি সময়ের মূল্য দাও সময় তোমার মূল্য দেবে আর যদি তুমি সময় নষ্ট করো সময় তোমার জীবন ধ্বংস করে দেবে। অপ্রয়োজনীয় জিনিসে সময় নষ্ট না করে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ কাজে মন দিতে হবে আমরা চাইলে যেকোনো কিছু অর্জন করতে পারি। যদি আমরা সময়কে সঠিকভাবে ব্যবহার করি। কিন্তু যদি সময় নষ্ট করি তাহলে আমরা আমাদের সুযোগ হারিয়ে ফেলবো এবং পরে শুধুই আফসোস করতে হবে।

একজন যাত্রী এক মিনিটের জন্য ট্রেন মিস করলে মিনিটের মূল্য বুঝে। আর একজন ছাত্র পরীক্ষায় ফেল করলে তার এক বছরের মূল্য বোঝে। তাই যদি তুমি তোমার জীবনে কিছু অর্জন করতে চাও কখনো অলস হইও না আর দেরি করো না। না হলে সেই অলস লোকটার মত আফসোস করতে হবে। যে সূর্যাস্তের আগে প্রাসাদে পৌঁছাতে পারেনি। সবসময় তোমার সময়কে সঠিকভাবে ব্যবহার করো। পরিবারের সঙ্গে ছোট ছোট মুহূর্ত উপভোগ করো। বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটাও এবং তোমার স্বপ্ন ও লক্ষ্য পূরণের জন্য কাজ করো। তবেই তুমি একটি পরিপূর্ণ জীবন উপভোগ করতে পারবে।

The post সফল হবার প্রথম নিয়ম। সময়কে মূল্য দাও। Value of Time appeared first on Trickbd.com.

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow